Category: গোপাল ভাঁড়

এর পর তোমার পালা

ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’
শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং এক সময় পেয়ে গেল।
শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐসব বুড়োদের বলতে লাগল, ‘এর পর তোমার পালা!’

হাটে গাই পায়েস খাই

গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, ‘বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?’
গোপালের ভাইপো বলল, ‘দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি। আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে।’ ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল।
দু হাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে বললেন গোপাল, ‘আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা?’
দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, ‘আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?’ –

গোপালের আইন ব্যাখ্যা

লোক পরম্পরায় গোপালের সূক্ষ্ম বিচার বৃদ্ধি দেখে এক প্রতিবেশী তার মোকদ্দমা চালাবার জন্য গোপালকে অনুরোধ করে। কিন্তু গোপাল মোকদ্দমার কাহিনী শুনে বারবার না-না করা সত্ত্বেও প্রতিবেশী লোকটি নাছোড়বান্দা হওয়ায় বাধ্য হয়ে গোপাল প্রতিবেশীর মোকদ্দমাটি হাতে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মামলার হার হয়।

ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে বললে এ কি করলেন, আমার সব গেল। তখন গোপাল বলল, দেখুন ব্যারাম সেরে উঠতে উঠতেও লোক অনেক সময়ে হার্টফেল করে মারা যায়। তাকে ব্যারাম-মরা বলা যেতে পারে না। আপনার ব্যাপারটও ঠিক সেই রকম। মামলার বিচারে ‍আপনি হারেন নি। হাকিমেরা মূলত তিনটি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে রায় দেয় সাধারণত‍‍- তিনটি বিষয় হল অনুমান, প্রমাণ এবং স্বীকারোক্তি।
অনুমানটাও আপনার স্বপক্ষে ছিল, অর্থাৎ যে-কেউ মামলার বিবরণ শুনলে বলতে বাধ্য ছিল যে বিবাদী দোষী। হাকিমও নিশ্চয়ই তাই ভেবেছেন। কিন্তু অনুমানের উপর নির্ভর করে তো আর রায় দেওয়া চলে না।
দ্বিতীয়তঃ হলো প্রমাণ। প্রমাণ করা এত শক্ত যে, ওর ভেতরে শেষ পর্যন্ত গলদ থেকেই যায়। আমি আপনার মামলা প্রমাণ করে ছেড়েছি, এ কথা যাকে জিজ্ঞাসা করবেন সেই বলবে, কিন্তু ঐ যে বললাম-গলদ রয়ে গেছে গোড়ায়। থাকতেই হবে গলদ! বিপক্ষের উকিল আমাদের সব অকাট্য প্রমাণগুলি মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তৃতীয়তঃ বাকি রইল স্বীকারোক্তি। আসামী লোকটা যদি ভদ্রতা করে দোষ স্বীকার করে যেতো, তাহলে আর কোন কিছুতেই আটকাতো না আমাদের। কিন্তু তা সে কোনমতেই করলে না কিনা! তাতে আমি আর কি করতে পারি বলুন। মামলা জেতবার আগেই তো হার হলো। ব্যায়রাম থেকে সেরে উঠতে উঠতে হার্টফেল। এতে বলুন আমার কি দোষ আছে? কারণ এর বেশী আর ভদ্রলোককে কিছু বলতে পারেই না গোপাল।
ভদ্রলোক রেগেই চলে গেলেন।