আউট

:: আউট! ::

ঘটক একগাল হেসে বলল, ‘স্যার, ছেলের যেমন হাইট, তেমনি ফাইট করার মতো স্বাস্থ্য!’
হাসান সাহেব জায়গায় বসেই লাফিয়ে উঠলেন, ‘মানে? ফাইট করার মতো শরীর-স্বাস্থ্যের ছেলে দিয়ে কী হবে? সংসারে মারামারি করার জন্য জামাই খুঁজছি নাকি?’
‘স্যার, আমি আসলে তা বোঝাতে চাইনি। যা দিনকাল পড়েছে! পরিবারের কর্তারা যদি সন্ত্রাসীদের কাবু করতে না পারে, তাহলে ঘরের ভেতরের নিরাপত্তা দেবে কে?’
হাসান সাহেব দুচোখে ঘটক দেখতে পারেন না। কিন্তু এই ঘটকের কেস আলাদা। খুব গুছিয়ে কথা বলে। যদিও বাস্তবজীবনে এ ধরনের মানুষ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকাই উত্তম। কারণ, তারা অঘটনও ঘটায় গুছিয়ে; তবে এই ঘটক অঘটনঘটনপটিয়সী নয় বলেই হাসান সাহেবের মনে হয়েছে। যাহোক, তিনি আলোচনাকে আবার লাইনে নিয়ে এলেন, ‘ছেলে কী করে?’
‘খেলে।’
‘খেলে! গুড। খেলোয়াড় ছেলে আমার পছন্দ। আমি নিজেও একসময় খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যে ছিল না, আফসোস! তা ছেলে খেলাধুলায় কেমন?’
‘পারফরম্যান্স ভালো। মাঠে থাকলে তো পিচে একেবারে আগুন ধরিয়ে দেয়! কথায় আছে না, “যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে”? ছেলের লক্ষ্যই বাউন্ডারি।’
‘বেশ ভালো খেলোয়াড় মনে হচ্ছে!’
‘জি। ছেলে আজ পর্যন্ত একবারও রান আউট হয়নি!’
‘বাহ্! ছেলের র‌্যাংকিং কেমন?’
‘র‌্যাংকিং নিয়ে টেনশন করবেন না। নাম্বার ওয়ান হওয়া তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র!’
‘তাহলে তো নামডাকও আছে!’
‘শীর্ষদের তালিকায় নাম পাবেন।’
‘কী বলো! দারুণ! তবে ছেলে আবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত না তো?’
‘না, না। ছেলে খুবই নীতিমান। নিজের দলের জন্য জান পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত।’
‘বেশ, বেশ! কিন্তু নীতিমানদের সব সময়ই তো টাকাপয়সার অভাব থাকে। সে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারবে তো?’
‘সেই চিন্তা করবেন না। ছেলের ইনকাম ব্যাপক। প্রতি খেলায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা!’
‘তোমার কথা শুনে মনটাই ভরে গেল। ছেলে এত বড় ক্রিকেটার ভাবতেই ভালো লাগছে!’
‘ছেলে ক্রিকেটার কে বলল? ছেলে তো পিকেটার।’
‘তার মানে! তুমি যে বললে, ছেলে মাঠে শুধু বাউন্ডারি হাঁকায়। এত বড় খেলোয়াড় যে আজ পর্যন্ত রানআউট হয়নি?’
‘জি, ঠিকই বলেছি, স্যার। দলীয় কর্মসূচির দিন ছেলে যখন ফিল্ডে থাকে, তখন পিচের রাস্তার ওপর টায়ারে আগুন জ্বালানো তার দায়িত্ব। বাউন্ডারিতে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশই তার ইট-পাটকেলের টার্গেট। তা ছাড়া দাবড়ানি দিয়েও পুলিশ আজ পর্যন্ত এই ছেলেকে ধরতে পারেনি। কারণ, ছোটবেলা থেকেই তার সঙ্গে দৌড়ে কেউ পারে না; রানআউট হওয়ার মতো ছেলেই সে না! ছেলে বাস পোড়ালে পায় ১৫ হাজার টাকা আর ভাঙচুর করলে পায় পাঁচ হাজার টাকা। বুঝতেই পারছেন, কী পরিমাণ ইনকাম! তবে ছেলের নীতি ভালো। দলবদল করে না; সব সময়ই বিরোধী দলের হয়ে কাজ করে! দেশে যখন অধিকাংশ বেকারের কর্মসংস্থানেরই ব্যবস্থা নেই; তখন নিয়মিত ওয়ান-ডে আর টেস্ট হরতালে এই ছেলের ইনকাম নিয়ে কোনো টেনশনই নেই। সোনার টুকরা ছেলেদের দিয়েও যা সম্ভব নয়, এই ছেলেকে দিয়ে তা-ই সম্ভব! এমন ইটের টুকরা ছেলে ঘরে থাকা মানে ঘরও নিরাপদ!’
হাসান সাহেব রাগে সাউন্ড গ্রেনেডের মতো ফেটে পড়লেন। চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘আউট! আউট!’

Leave a Reply

Your email address will not be published.